মায়ের হাতের পিঠা খাওয়া হলো না শোভা-সবুজ দম্পতির

মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়েছিল শোভার। মাকে রাতের রান্না করে রাখতে বলেছিলেন। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে রাতের খাবার ইচ্ছা ছিল তার। মা মেয়ে-জামাইয়ের জন্য পিঠা তৈরি করে রেখেছিলেন। কিন্তু সেই খাবার আর খাওয়া হলো না শোভা-সবুজ দম্পতির।

রোববার রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতীর আনালিয়াবাড়ি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন- নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার আরজি মারিয়া গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে অসিউল ইসলাম সবুজ (৩০) ও তার স্ত্রী পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার যুক্তিতলা গ্রামের আইয়ুব আলীর মেয়ে ওসরা খাতুন শোভা (২৬)।

স্বজনরা জানান, সবুজ সম্প্রতি একটি নতুন মোটরসাইকেল কিনেছেন। গত দুর্গাপূজার ছুটিতে এসে বাগাতিপাড়া থেকে সেই গাড়িটি কর্মস্থল ঢাকায় নিয়ে যান। তিনি সেখানে প্রাইভেট কোম্পানিতে হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সোমবার নাটোরের বিআরটিএ অফিস থেকে সেই গাড়িটির নতুন ডিজিটাল নাম্বার প্লেট দেওয়ার কথা ছিল। সে কারণেই স্ত্রী শোভাকে সঙ্গে নিয়ে রোববার সন্ধ্যার পূর্বে সবুজ নতুন মোটরসাইকেলযোগে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এজন্য তিনি অফিস থেকে ৫ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন।

ঢাকা থেকে শ্বশুরবাড়ি ঘুরে বাগাতিপাড়ায় নিজ বাড়িতে আসার কথা ছিল। বের হওয়ার সময় স্ত্রী শোভা তার নিজের মাকে ফোনে খাবার রান্না করে রাখতে বলেন। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে সবার সঙ্গে রাতের খাবার খাবেন। শোভার মা মেয়ে ও জামাইয়ের জন্যে পিঠা বানিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু মায়ের পিঠা খাওয়ানোর সেই ইচ্ছাও পূরণ হলো না। সোমবার জোড়া লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরলেন শোভা-সবুজ দম্পতি।

২০১৪ সালে তাদের বিয়ে হলেও তারা নি:সন্তান ছিলেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

এদিকে সোমবার তাদের লাশ এলাকায় এলে শোকের ছায়া নামে। পরে দুপুর ২টায় গ্রামের বাড়ি বাগাতিপাড়ার নওশেরা ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার পর লাশ উদ্ধার করে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানায় রাখে পুলিশ। পরে পরিচয় শনাক্তের পর আইনগত প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।